umrah.com.bd
Islam

ইতিকাফের ফজিলত ও উপকার

March 31, 2024
image

ইতিকাফের পরিচয়:

 

ইতিকাফ শব্দটি আরবি। অভিধানে এর শাব্দিক অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে, অবস্থান করা, অভিমুখী হওয়া, নিবেদিত হওয়া, নিরবচ্ছিন্ন হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততাকে ত্যাগ করে, এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। বা যে স্থানকে নামাজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 

 

ইতিকাফের ফজিলত ও উপকার : 

 

ইতিকাফ একটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। রমজানের ফজিলত ও বরকত লাভ করার ক্ষেত্রে ইতিকাফের ভূমিকা অপরিসীম। 

হাদিসে এসেছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর লাভ করার সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর লাভের আশায় একবার রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেন। এরপর কয়েকবার ইতিকাফ করেন মাঝের ১০ দিন। এরপর এক সময় শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতে শুরু করেন এবং ইরশাদ করেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর। সহিহ বুখারি, হাদিস ২০২০ আরেক হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের মাঝের ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর এভাবে ইতিকাফ করার পর যখন রমজানের ২১তম রাত এলো তখন তিনি ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে। কারণ আমাকে শবেকদর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল (যে, তা শেষ দশকের অমুক রাত।) এরপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা শেষ দশকে শবেকদর অন্বেষণ কর এবং প্রতি বেজোড় রাতে অন্বেষণ কর। সহিহ বুখারি, হাদিস ২০২৭ (৩) ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকার হলো- ইতিকাফকারী অত্যন্ত পবিত্র ও গোনাহমুক্ত পরিবেশে থাকে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এখানে তার অবস্থানটিই এক ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। তাই সে অবসর সময়ে কোনো আমল না করলেও দিনরাত তার মসজিদে অবস্থান করাটাই স্বয়ং ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। সুবহানাল্লাহ। এ ছাড়াও ইতিকাফকারী দুনিয়ার যাবতীয় ঝুট ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে। আল্লাহর ইবাদতের জন্য নিজেকে পূর্ণ প্রস্তুত করে আল্লাহ-অভিমুখী হয়। (৪) ইতিকাফের মাধ্যমে রোজার যাবতীয় হক ও আদব রক্ষা করার তৌফিক হয়। ইত্যাদি। 

 

ইতিকাফের প্রকার : 

১. সুন্নত ইতিকাফ : রমজানের শেষ দশকে একুশ তারিখের রাত [অর্থাৎ ২০ তারিখ সূর্যাস্তের আগ] থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতিকাফ করা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর এ দিনগুলোতে ইতিকাফ করতেন, তাই একে সুন্নত ইতিকাফ বলা হয়। 

২. নফল ইতিকাফ : রমজানের শেষ দশকে পূর্ণ ১০ দিনের কম ইতিকাফ করা। অথবা বছরের অন্য যে কোনো সময় যতক্ষণ ইচ্ছা, ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। 

৩. ওয়াজিব ইতিকাফ : মান্নতকৃত ইতিকাফ এবং সুন্নত ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে গেলে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব। ইতিকাফের স্থান : সওয়াবের দিক থেকে ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদে হারাম। এরপর মসজিদে নববী। তারপর মসজিদে আকসা। এরপর যে কোনো জামে মসজিদ। তারপর যে কোনো পাঞ্জেগানা মসজিদ। তবে নারীদের জন্য ইতিকাফের স্থান হলো ঘরের নির্দিষ্ট কোনো স্থান। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৯) 

 

ইতিকাফের প্রস্তুতি : 

আল্লাহর ঘর সর্বোচ্চ সম্মানিত ও পবিত্রতম স্থান। এই পবিত্রতম স্থানে অবস্থানের জন্য সর্বপ্রথম মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। তাহলে ইতিকাফে বসাটা সার্থক হবে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাহ্যিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা গ্রহণ করা। ইরশাদ হচ্ছে, হে আদম-সন্তানরা! যখনই তোমরা কোনো মসজিদে আসবে, তখন নিজেদের শোভা অবলম্বন করবে (অর্থাৎ পোশাক পরে নেবে)। (সূরা আরাফ : ৩১) পাশাপাশি নিজের অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার প্রতিও দৃষ্টি দেওয়া। ইরশাদ হচ্ছে, হে আদম-সন্তানরা! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং (ব্যবস্থা করেছি) সাজসজ্জার বস্তু। তবে তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম। (সুরা আরাফ : ২৬) মোটকথা, তওবা ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজের অতীত গোনাহ ক্ষমা করিয়ে নেওয়া। আল্লাহর ঘরের আদব রক্ষা করে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে প্রাণভরে দোয়া করা। 

 

আল্লাহপাক সব মুসলিম উম্মাহকে ইতিকাফের যাবতীয় নেক আমল সহিহশুদ্ধভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন এবং সব ইতিকাফকারীকে ইতিকাফের পরিপূর্ণ ছাওয়াব ও ফজিলত দান করুন। আমিন।